উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬/০২/২০২৪ ১১:০২ এএম

তরুণ-তরুণীদের বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করতে সম্প্রতি নতুন আইন করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এর অধীনে প্রতিবছর দেশটিতে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে কমপক্ষে ৬০ হাজার তরুণ-তরুণীকে। কিন্তু এমন আইনের ফলে বিভিন্ন কারণে আগে থেকেই হতাশ তরুণরা এবার দেশ ছেড়ে পালানোর কথা ভাবছেন।

শ্রকিম অধিকারকর্মীদের বরাত দিয়ে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী বলছে, দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করা তরুণদের বেশিরভাগই পাড়ি জমাতে পারে থাইল্যান্ডে।

সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগ দেয়ার আইন ঘোষণা করেন জেনারেল মিন অং হ্লাইং। বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে দুর্বল হয়ে পড়ছে, হ্লাইংয়ের এমন আকস্মিক ঘোষণা তারই ইঙ্গিত দেয়।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিস বলছে, সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে তাদের ২১ হাজার সদস্য কমে গেছে। এর মধ্যে আছে হতাহত হওয়া, চাকরি ছেড়ে যাওয়া অথবা পক্ষত্যাগ করা সেনা।

জান্তা-বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশটির ছায়া ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)। সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদানের বিষয়ে তারা বলছে, এ আইন মেনে চলতে বাধ্য নয় জনগণ। আইনটি বেআইনি।

এদিকে মিয়ানমারের তরুণদের দেশ ছাড়ার বিষয়ে থাইল্যান্ড-ভিত্তিক ফাউন্ডেশন ফর এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ইউ হটু চিট বলেছেন,

আমি শুনেছি ১৮ বছরের বেশি বয়সী তরুণরা যেকোনো উপায়ে মিয়ানমার ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলস্বরূপ, থাইল্যান্ডে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা বাড়বে। আর বেশি অবৈধ অভিবাসী শ্রমিক থাকার মানে হলো আরও বেশি শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটা

তরুণদের দেশত্যাগের কারণে মিয়ানমারে মানবসম্পদ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,

মানবসম্পদের ঘাটতি মিয়ানমারে কোনো নতুন সমস্যা নয়। তবে এটি আরও খারাপ হবে এবং মিয়ানমারে মৌলিক শ্রমিক খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

অন্যদিকে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জাতিগত বিদ্বেষও ছড়ানো হচ্ছে মিয়ানমারে। সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর এই অঞ্চলের জাতিগত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে শুরু করেছে জান্তা কর্তৃপক্ষ।

সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর প্রতিবেদন মতে, মিয়ানমারের পুরনো রাজধানী শহর ইয়াঙ্গুন ও অন্যতম বড় শহর মান্দালয়সহ জাতিগত বামার সংখ্যাগরিষ্ঠ শহরগুলোতে জাতিগত রোহিঙ্গাবিরোধী পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

এসব পোস্টার ও লিফলেটের মাধ্যমে জাতিগত রোহিঙ্গাদের বয়কটের আহ্বান জানানো হচ্ছে। রোহিঙ্গা মালিকানাধীন দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোঁরায় না যেতে বলা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এসব শহরে যেসব জাতিগত রোহিঙ্গা বসবাস করেন তাদেরকে তাদের নিজ রাজ্য রাখাইনে ফিরে যেতে বলা হচ্ছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চি’র সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এরপর গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীদের নির্মমভাবে দমন করা হয়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনায় গণতন্ত্রকামীরা হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। গত তিন বছর ধরেই জান্তা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াই চলছে। তবে সম্প্রতি বিদ্রোহীদের আক্রমণে সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বিজিপিসহ সরকারি সব বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে তারা। সুত্র: সময় টিভি

পাঠকের মতামত